আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সেতার মূৰ্চ্ছনা ।
সেতার মূৰ্চ্ছনা
বাম হস্তের তর্জ্জনী বা মধ্যমাঙ্গুলী দ্বারা যে কোন সারিকায় তার আকর্ষণ করিয়া অনুলোম বা বিলোম গতিতে পরের বা পূর্ব্ববর্ত্তী এক, দুই বা ততোঽধিক স্থর অবিচ্ছেদে প্রকাশ করার নাম মূর্ছনা। মূর্ছনা রাগাদির প্রধান অলঙ্কার স্বরূপ এবং ইহা দ্বারা রাগাদির যথেষ্ট বিস্তার ও শোভাবৃদ্ধি হয়। অনুলোমে আঘাতানন্তর আকর্ষণ, এবং বিলোমে অগ্রে আকর্ষণ পরে আঘাত হইবে, এই নিয়মটী স্মরণ রাখা কৰ্ত্তব্য।
মূর্ছনাস্থলে যে সুর হইতে মূর্ছনা আরম্ভ হয়, তাহার নিম্নে আঘাতের চিহ্ণ এবং মূর্ছনাযোগে প্রকাশিত স্বর বা স্বরসমূহের নিম্নে শূন্য ব্যবহার করা যাইবে। যেখানে কোন নিম্ন স্বরের সারিকায় তার আকৃষ্ট হইয়া পর সুর আঘাতে প্রকাশ পাইবে, তথায় আহত সুরের নীচে আঘাতের চিহ্ন দেওয়া যাইবে। মূর্ছনার এইরূপ ~~~~~~~~~~~~” তরঙ্গিত রেখা চিহ্ণ নির্দ্দিষ্ট আছে, এই চিহ্ণটীও মূর্ছিত স্বরের নিম্নে থাকিবে ।
মূর্ছনার আর এক প্রকার নিয়ম আছে, তদ্বারা যে স্বর হইতে ইহা আরম্ভ হইয়া যে স্বরে শেষ হয়, তন্মধ্যগত শ্রুতিগুলি প্রকাশ করা যায়। এরূপ স্থলে মূর্ছনার চিহ্ন তরঙ্গিত রেখার পরিবর্তে এইরূপ বিন্দু রেখা চিহ্ন থাকিবে। স্বরমধ্যস্থিত শ্রুতিগুলি যে, একে একে স্পষ্ট দেখাইতে হইবে এমত নহে; বাদনের কৌশলে উহারা অবিচ্ছেদে প্রকাশ পাইবে ।
মূৰ্চ্ছ না-সাধন ৷
অনুলোম ।
(৫২) পিলু—সম্পূর্ণ ।
মধ্যমান।
(৫৩) জংলা-খাম্বাজ—সম্পুর্ণ ।
মধ্যমান ।
(৫৪) ইমন—সম্পূর্ণ ।
মধ্যমান ।
(৫৫) বেলাবলী—সম্পূর্ণ ।
মধ্যমান।
(৫৬) ছায়ানট—সম্পূর্ণ ।
শ্লথ-ত্রিতালী ।
(৬০) কামোদ—সম্পূর্ণ ।
মধ্যমান ।
(৬১) তিলক-কামোদ—সম্পূর্ণ ।
শ্লথ-ত্রিতালী ।
(৬২) কেদারা—সম্পূর্ণ ।
দ্রুত-ত্রিতালী।
(৬৩) দেশ-মল্লার—সম্পূর্ণ ।
মধ্যমান ।
(৬৪) পরজ—সম্পূর্ণ ।
শ্লথ-ত্রিতালী ।
(৭৬) ইমন-ভূপালী—সম্পূর্ণ।
মধ্যমান ।
(৭৭) মিঞার-মল্লার।
মধ্যমান ।
নিপুণ বাদকগণ বাদনকালে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তারে আঘাত দিয়। নানাপ্রকার স্বরকৌশল প্রদর্শন পূর্ব্বক গতাদির মধুরতা বৃদ্ধি করিয়া থাকেন। এই প্রকার স্বরকৌশল প্রদর্শন করিতে হইলে তৃতীয় তারটী দ্বিতীয় তারের সমস্থরে না বাঁধিয়া উদারার নিম্ন সপ্ত- কের পঞ্চম করিয়া বাঁধিতে হয়; সুতরাং সেই তার হইতে প্রথম সারিকায় কোমল ধৈবত, দ্বিতীয় সারিকায় ধৈবত ও তৃতীয় সারিকায় নিষাদ সম্পন্ন হয়।

চতুর্থ প্রভৃতি অপরাপর সারিকায়ও শ্রুতি- বিভাগানুযায়িক অন্যান্য স্বরও উৎপন্ন হইতে পারিবে; এবং স্বরলিপি- বদ্ধ করিবার সময় ঐ সকল স্বরের নিম্নে এক একটা ক্ষুদ্রাক্ষরে “ভূ” দেওয়া যাইবে । চতুর্থ তারোৎপন্ন স্বর লিপিবদ্ধ করিবার সময় তাহার নিম্নে একটী ক্ষুদ্র “চ” লিখিত হইবে। কখন কখন পাঁচ চিহ্ণবিশিষ্ট তারে সারিকাযোগে উদারার নিম্ন সপ্তকের ঋষভাদি স্বরও প্রদর্শিত হইয়া থাকে। স্বরলিপির মধ্যগত এই সকল স্বরের নিম্নে সপ্তক জ্ঞাপক শূন্য চিহ্ণযোগে একটা ক্ষুদ্র “প” দেওয়া থাকিবে ।
আরও দেখুনঃ
1 thought on “সেতার মূৰ্চ্ছনা”