সেতার সংযোগালঙ্কার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সেতার সংযোগালঙ্কার ।

সেতার সংযোগালঙ্কার

দুই তিন (১) অথবা তদতিরিক্ত পরস্পর অবিরোধী স্বর নিম্ন- লিখিত নিয়মে একত্র ধ্বনিত হওয়ায় অনির্বচনীয় আনন্দকর চিত্তাকর্ষক একটী স্বরের উৎপত্তি হয়, সেই স্বরসংযোগকে সঙ্গীতে সংযোগালঙ্কার কহে । যেমন পীত এবং নীল বর্ণের মিশ্রণে হরিদ্বর্ণের উৎপত্তি, তেমনি দুইটী ভিন্ন ভিন্ন স্বর একত্র ধ্বনিত হইলে একটী স্বতন্ত্র ধ্বনি শ্রুতি- গোচর হইয়া থাকে (২) ।

স্থরনিচয় যেমন বাদী, সম্বাদী, অনুবাদী এবং বিবাদীর নিয়মে রাগে প্রযুক্ত হয়, সংযোগালঙ্কারেও তেমনি উক্ত চারিপ্রকারে সংযুক্ত হইয়। থাকে, সুতরাং সংযোগও চারি প্রকার হইল, যথা:–বাদী সংযোগ, সম্বাদী সংযোগ, অনুবাদী সংযোগ ও বিবাদী সংযোগ ।

বাদী সংযোগ আবার দুই ভাগে বিভক্ত, যথা :- স্বজাতীয় বাদী সংযোগ এবং বিজাতীয় বাদী সংযোগ। কোন সুরকে সপ্তকান্তরের সেই স্থরের সহিত সংযুক্ত করিলে তাহাকে স্বজাতীয় বাদী সংযোগ কহে; যেমন উদারা সপ্তকের ষড়জ এবং মুদারা সপ্তকের ষডুজ, উদারা সপ্তকের ঋষভ এবং মুদারা সপ্তকের ঋষভ, মুদারা সপ্তকের গান্ধার এবং তারা সপ্তকের গান্ধার ইত্যাদি স্বরের পরস্পর সংযোগ।

সমান শ্রুতিবিশিষ্ট অথচ অব্যবহিত পূর্ব্ব বা পরবর্তী সুর ব্যতীত যে উভয় সুরের পরস্পর সংযোগ, তাহাকে বিজাতীয় বাদী সংযোগ কহে। যেমন চতুঃশ্রুতি- বিশিষ্ট যড়্গজ এবং পঞ্চম, ত্রিশ্রুতি-বিশিষ্ট ঋষভ এবং ধৈবত, দ্বিশ্রুতি- বিশিষ্ট গান্ধার এবং নিষাদ ইত্যাদি স্বরের পরস্পর সংযোগ (১)। সপ্তম, অষ্টম এবং দ্বাদশ শ্রুতির ব্যবধানতায় যে দুই সুরের পর স্পর সংযোগ হয়, তাহাকে সম্বাদী সংযোগ কহে। যেমন গান্ধার এবং পঞ্চম, ষড়জ এবং গান্ধার, মধ্যম এবং নিষাদ ইত্যাদি স্বরের পরস্পর সংযোগ (২) ।

বাদী, সম্বাদী এবং অব্যবহিত পূর্ব্ব বা পরবর্ত্তী সুর পরিত্যাগে উভয় সুরের যে সংযোগ হয়, তাহার নাম অনুবাদী সংযোগ। অব্যব- হিত পূর্ব্ব বা পরবর্তী সুরের পরস্পর যোগকে বিবাদী সংযোগ কহে (১)। তাহা সহসা শুনিলে নিতান্ত শ্রুতিকঠোর বোধ হয়, সেই জন্য সংস্কৃত সুর-সংযোজয়িতারা সঙ্গীতে তাহাকে দৃষ্য জ্ঞান করেন (2) এইরূপ স্থর-সংযোগ-পদ্ধতি রাগের বাদী, বিবাদী ইত্যাদি বিবেচনায় ব্যবহার করা কর্ত্তব্য।

ষজ,ঋষভ ইত্যাদি প্রত্যেক স্বপ্নের স্বরগ্রাম অনুসারে যথানির্দিষ্ট শ্রুতিসংখ্যা সমতায় প্রকৃত এবং বিকৃত স্বরের অবিবেচনায় উল্লিখিত চারি প্রকার প্রণালীতে স্বরের সংযোগ হইয়া থাকে। ইংরাজী-সঙ্গীত- তত্ত্বজ্ঞেরা চিত্রবিদ্যার সহিত সঙ্গীতবিদ্যার বিশেষ সম্বন্ধ স্থির করেন।

প্রাচীন সংস্কৃত সঙ্গীত-শাস্ত্রবিশারদ মহামহোপাধ্যায় মহর্ষি নারদ স্বকৃত সংহিতায় এতদ্বিষয়ের অপ্রতিপোষকতা করেন নাই। সংস্কৃতমতে ভূজের রং কৃষ্ণবর্ণ, ঋষভ ধূম্রবর্ণ, গান্ধার সুবর্ণবর্ণ, মধ্যম কুন্দপুষ্পের বর্ণ, পঞ্চম পীতবর্ণ, ধৈবত ধূসরবর্ণ এবং নিষাদ শুকপক্ষীর ন্যায় হরিদ্বর্ণ (১)।

ফিল্ড সাহেব (২) কৃত ইংরাজী বর্ণবিদ্যা-বিষয়ক গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায়, যড়জের সহিত নীল, ঋষভের সহিত ধূম্র, গান্ধারের সহিত রক্ত, মধ্যমের সহিত নারঙ্গী, পঞ্চমের সহিত পীত, ধৈবতের সহিত ধূসর এবং নিষাদের সহিত হরিদ্বর্ণের মিলন আছে। উক্ত গ্রন্থকার আরও বলেন যে, নীল, পীত এবং লোহিত এই তিনটী বর্ণই মূলবর্ণ ৷ ইন্দ্রধনুর প্রতি দৃষ্টি করিলে সচরাচর কথিত তিনটী বর্ণেরই উপলব্ধি হইবে। ষভূজের সহিত নীল, গান্ধারের সহিত লোহিত, এবং পঞ্চমের সহিত পীত বর্ণের সৌসাদৃশ্য পূর্ব্বে স্থিরীকৃত হইয়াছে ।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সংস্কৃত সঙ্গীত গ্রন্থকর্তারা শ্রুতি অনুযায়িক যেরূপ সুর-সংযোগ- পদ্ধতি বিধিবদ্ধ করিয়াছেন (৩), বর্ণগত সংযোগের সহিত তাহার বিশেষ প্রতিপোষকতাও দেখিতে পাওয়া যায়। নীলবর্ণের সহিত হরিদ্বর্ণের সংযোগ যেমন চিত্রবিদ্যাবিৎ পণ্ডিতদিগের মতে নিতান্ত দৃষ্টি কদর্য্য, ষডুজের সহিত নিষাদের সংযোগও তেমনি সঙ্গীত-তত্ত্বজ্ঞের নিকটে শ্রবণবিরুদ্ধ হয়। সুর সংযোগপদ্ধতি স্বরলিপিবদ্ধ করিতে গেলে নিম্নলিখিত নিয়ম অবলম্বন করা কর্তব্য (১) ।

 

 

ধনুশ্চিহ্ণই সংযোগালঙ্কারজ্ঞাপক চিহ্ন। যত প্রকার সুরসংযোগ- প্রণালী প্রদর্শিত হইল, তৎসমুদয় আমাদের সেতারে প্রয়োজন হয় না। তন্নিমিত্ত যে সংযোগগুলি সহজে এবং স্বপ্নায়াসে সেতারে প্রদর্শন করাইতে পারা যায়, সেই গুলি নিম্নলিখিত নিয়মে ক্রমে সাধান যাইতেছে । নায়কী বা অন্য তারে স্পৃষ্ট স্বর প্রকাশের সমকালে শ্রেষ্ঠালঙ্কার ব্যবহার হইতে পারে। কৃন্তন, স্পর্শ-কৃন্তন, বিক্ষেপ, প্রক্ষেপ, আশ ও মূৰ্চ্ছনা ইত্যাদি সকল স্থলেই যথামাত্রানুযায়ী এইরূপ সংযোগ হইতে পারে। সমকাল-প্রকাশ্য স্বরগুলি ধনুশ্চিহ্ণ দ্বারা যোজিত থাকিবে।

অনুলোম ও বিলোম ।

 

সেতার সংযোগালঙ্কার

 

সেতার সংযোগালঙ্কার

 

অনুলোম ও বিলোম ।

 

সেতার সংযোগালঙ্কার

 

অনুলোম ও বিলোম ।

 

সেতার সংযোগালঙ্কার

 

আরও দেখুনঃ

1 thought on “সেতার সংযোগালঙ্কার”

Leave a Comment