আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় স্বরনিবন্ধনী প্রকরণ ।
স্বরনিবন্ধনী প্রকরণ
ডারা, ডিরি, ইত্যাদি বোলযোগে যথানিৰ্দ্দিষ্ট মাত্রানুযায়িক তালে। এবং স্বরবর্ণবিভূষিত শ্রুতি-মনোহর রাগে সংবদ্ধ হইয়া নানা ছন্দে সেতারাদি যন্ত্রে যাহা বাদিত হয়, সংস্কৃতসঙ্গীত-গ্রন্থকারেরা তাহাকে স্বরনিবন্ধনী কহেন। সচরাচর বাদকেরা স্বরনিবন্ধনীকে “ গৎ ” বলিয়া ব্যাখ্যা করেন। ঐ গৎ আবার যদি এস্রারে বাদিত হয়, তাহা হইলে উহাকে “ লেহারা ” বলে, “ লেহারা ” এবং “ গৎ ” এই দুইটাই পারস্য শব্দ। সামান্যতঃ স্বরনিবন্ধনীমাত্রেই প্রায় দুইটী করিয়া পাদ বা ভাগ থাকে।
প্রথমটীর নাম আস্থায়ী এবং পরেরটার নাম অন্তরা। আস্থায়ী এবং অন্তরা ব্যতীত বাদকেরা সমস্থান ও রাগ স্থির রাখিয়া স্বীয় স্বীয় ইচ্ছামত আরও অতিরিক্ত পাদবিশেষদ্বারা গতের বিস্তার করিতে পারেন ; স্বরনিবন্ধনীর অতিরিক্ত ঐরূপ পাদনিচয়কে পারস্য- ; ভাষায় “ উপজ ” কহে, সংস্কৃতভাষায় উহার নাম ক্ষুদ্রতানিকা প্রত্যেক ক্ষুদ্রতানিকার অন্তে পূর্ব্ব সমস্থান স্থির রাখিয়া প্রথম পাদ আস্থায়ী প্রদর্শন করা কর্তব্য।
সঙ্গীত-গুরু ভরতাচার্য্য বলেন, যজ্বাদি-সপ্ত-স্বর-মণ্ডিত, শ্রুতি, গমক এবং মূর্ছনাদি (২)-বিভূষিত লোকচিত্তহারী যে ধ্বনিবিশেষ তাহার নাম রাগ। কথিত আছে, পৃথিবীর সৃষ্টিকালে ভগবান্ ব্রহ্মা প্রজা- রঞ্জনজন্য ছয়টী ঋতুর অনুসারী করিয়া আদি ছয়টা মাত্র রাগ প্রথমে প্রচার করেন। যথা : –শ্রী, বসন্ত, পঞ্চম, মেঘ, ভৈরব এবং নট- নারায়ণ। অনন্তর ছত্রিশটী রাগিণী ঐ ছয়টী রাগের ভার্য্যারূপে ক্রমে কল্পিত হয়।
ঐ ছয় রাগ এবং ছত্রিশটী রাগিণী, ইহাদিগের পরস্পর মিশ্রণে আবার বহুতর উপরাগ এবং উপরাগিণীর ক্রমশঃ সৃষ্টি হইয়া আসিতেছে। উক্ত রাগ রাগিণী সকল শুদ্ধ, সালঙ্ক এবং সংকীর্ণ এই তিন জাতিতে বিভক্ত। যে সকল রাগ অন্য রাগের সংশ্রবে না জন্মিয়া স্বতঃসিদ্ধরূপে প্রতিপন্ন হয়, তাহাদের নাম শুদ্ধজাতি, কথিত আদি ছয়টী রাগ ব্যতীত শুদ্ধজাতীয় রাগ আর নাই ( ১ ) । দুইটী রাগের মিশ্রণে যে সকল রাগ জন্মে, তাহারা সালঙ্ক জাতীয়; আর বহুতর রাগসংযোগে যে সকল রাগ জন্মিয়া থাকে, তাহাদিগকে সংকীর্ণ জাতীয় রাগ বলে।
সচরাচর সংকীর্ণ জাতীয় রাগের ভাগই অধিক দেখিতে পাওয়া যায়। এই তিন জাতীয় রাগের প্রত্যেকেই আবার ঔড়ব, ষাড়ব এবং সম্পূর্ণ এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হইয়া থাকে। যে সকল রাগ পাঁচ স্বরে মণ্ডিত অর্থাৎ পাঁচটী স্বরে সম্পন্ন হইয়া থাকে, তাহারা ঔড়ব ( ২ ) শ্রেণীভুক্ত।
যে রাগগুলি ছয় সুর বিশিষ্ট তাহারা ষাড়ব ( ৩ ) শ্রেণীয়, আর যে রাগ সমূহ সাত ক্ষুর বিশিষ্ট, সে গুলিকে সম্পূর্ণ শ্রেণীভুক্ত রাগ কহে ( ৪ )। যজ, ঋষভ, গান্ধার, মধ্যম, পঞ্চম, ধৈবত এবং নিয়াদ এই সপ্ত স্বরের মধ্যে যে স্বরটী যে রাগে বহুলভাবে প্রযুক্ত হয়, সেই স্বরকেই সেই রাগের বাদী বা অংশ অথবা রাজা এবং হিন্দী ভাষায় জান বলে। বাদীর সহযোগী যে সুর তাহাকে সম্বাদী বা মন্ত্রী বলা যায়।
রাগবিশেষে যে সুরবিশেষ সংযোজিত হইলে রাগ ভ্রষ্ট হয়,, তাহার নাম বিবাদী অথবা বৈরী। বাদী, সম্বাদী এবং বিবাদী ব্যতীত অবশিষ্ট যে সুরগুলি রাগ-মধ্যে ব্যবহৃত হয়, তাহাদের নাম অনুবাদী বা ভৃত্য। যে সকল রাগ সম্পূর্ণ শ্রেণীভুক্ত বিকৃত স্বর ব্যতীত তাহাদের বিবাদী হুর কখনই সম্ভবে না। যেহেতু সম্পূর্ণ শ্রেণীভুক্ত রাগসমূহে তদুপযোগী সাত সুরেরই প্রয়োজন হইয়া থাকে ।
(১) লুম—সম্পূর্ণ
দ্রুত-ত্রিতালী
(২) বৃন্দাবনী সারঙ্গ—ওড়ব
দ্রুত-ত্রিতালী
(৩) বিভাস—খাড়ব
দ্রুত-তিালী
(8) দেশ-সম্পূর্নর
দ্রুত-তিালী
(৫) দেবকিরী বা দেওগিরী—সম্পূর্ণ
মধ্যমান
(৬) গৌড়সারঙ্গ—সম্পূর্ণ।
মধ্যমান
(৭) খাম্বাবতী বা খাম্বাজ—সম্পূর্ণ
শ্লথ-ত্রিতালী
(৮) ইমন-সম্পূর্ন
মধ্যমান
(৯) সিন্ধু-সম্পূর্ন
একতাল
(১০) ঝিঝিয়াটা-সম্পূর্ন
একতালা
আরও দেখুনঃ
1 thought on “স্বরনিবন্ধনী প্রকরণ”