আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পিত্তলের দ্বিতীয় তারে প্রকারান্তর স্বরগ্রাম সাধন ।
পিত্তলের দ্বিতীয় তারে প্রকারান্তর স্বরগ্রাম সাধন
যে সকল স্বর পূর্ব্বে পাকা অর্থাৎ নায়কী তারে সাধিত হইয়াছে সেই সকল স্বর যদি কাঁচা তারে সাধিতে হয়, তাহা হইলে তৎসমুদায় স্বরলিপিবদ্ধ করিবার সময় তাহাদিগের মস্তকোপরি এইরূপ চতুষ্কোণ চিহ্ন ব্যবহার করা যাইবে। পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, দুই চিহ্ন বিশিষ্ট কাঁচা তার ছাড়িয়া আঘাত করিলে উদারার ষড়জ হইবে ঐতার বামহস্তের তর্জ্জনীদ্বারা দ্বিতীয় পর্দায় চাপিয়া আঘাত করিলে উদা-
রার ঋষভ, তৃতীয় পর্দায় চাপিয়া আঘাত করিলে উদারার গান্ধার হইবে।
‘নায়কী তার ছাড়িয়া আঘাত করিলে উদারার মধ্যম হয়, কিন্তু দ্বিতীয় তার চতুর্থ পর্দ্দায় চাপিয়া আঘাত করিলেও ঐ মধ্যম হইবে। নায়কী তার দ্বিতীয় পর্দায় চাপিয়া আঘাত করিলে যে পঞ্চম হয়, দ্বিতীয় তার ষষ্ঠ পর্দায় চাপিয়া আঘাত করিলেও সেই পঞ্চম প্রদর্শিত হইবে।
নায়কী তার তৃতীয় পৰ্দ্দায় চাপিয়া আঘাত করিলে উদারার ধৈবত হয়, দ্বিতীয় তার সপ্তম পৰ্দ্দায় চাপিয়া আঘাত করিলেও উদারার ধৈবত হইবে । নায়কী তার পঞ্চম পর্দ্দায় চাপিয়া আঘাত করিলে উদারার নিষাদ হয়, দ্বিতীয় তার অষ্টম পর্দ্দায় চাপিয়া আঘাত করিলেও উদারার নিষাদ হইবে। এই রূপে দ্বিতীয় তারের দ্বারা নবম পর্দায় মুদারার ষজ, একাদশ পর্দায় ঋষভ, দ্বাদশ পর্দায় গান্ধার, ত্রয়োদশ পর্দ্দায় মধ্যম, চতুর্দ্দশ পর্দায় পঞ্চম, পঞ্চদশ পৰ্দ্দায় ধৈবত এবং ষোড়শ পর্দায় নিষাদ স্বর সম্পন্ন হইয়া থাকে ।
প্রথম, পঞ্চম ও দশম এই তিনখানি পর্দ্দায় কাঁচা তার চাপিয়া আঘাত করিলে ক্রমান্বয়ে উদারার কোমল ঋষভ, উদারার কড়ি মধ্যম ও মুদারার কোমল ঋষভ সম্পন্ন হয়। এই নিয়মে কাঁচা তারে মুদারা গ্রাম সম্পূর্ণরূপে সংসাধিত হইয়া থাকে; কিন্তু উক্ত নিয়মে যে সমুদায় স্বর সাধিত হয়, শ্রুতিবিভাগানুসারে বিচার করিয়া দেখিতে গেলে সমুদায় গুলি ঠিক প্রকৃত স্বর হয় না, কোন কোনটী প্রায়ই কিছু কিছু তীব্রভাব ধারণ করে। বাহুল্যভয়ে বা তত বিশেষ প্রয়োজন বোধ না হওয়াতে এস্থলে তাহার বিচার উপেক্ষিত হইল ।
সেতার যন্ত্রে সচরাচর যে ষোল বা সতরখানি পর্দা থাকে, তদ্বারা পূর্ণ উদারা, মুদারা ও তারার অর্দ্ধ, এই সার্দ্ধ-দ্বিসপ্তক স্বর প্রতিপন্ন হইয়া থাকে, কিন্তু শুদ্ধ কাঁচা তারে স্বরসাধন করিতে হইলে উদারা ও মুদারা এই দুই সপ্তকের অধিক স্বর পাওয়া যায় না। যে সেতারে সতরখানি পদ৷ আবদ্ধ থাকে, তাহাতে বড় অধিক তারার ষড়জ পর্য্যন্ত পাওয়া যাইতে পারে। এস্থলে কেহ কেহ এরূপ বলিতে পারেন। যে, শুদ্ধ কাঁচা তার সাধনে যদি সার্দ্ধ-দ্বিসপ্তক না পাওয়া যায়, তাহা হইলে নায়কী তার পরিত্যাগ করিয়া স্বতন্ত্ররূপে কাঁচা তারে আবার স্বরগ্রাম সাধনের কারণ কি ?
তাহার তাৎপর্য্য এই যে, পাকা লৌহ- নির্ম্মিত নায়কী তারের ধ্বনি অপেক্ষা পিত্তল-নিৰ্ম্মিত কাঁচা তারের ধ্বনি কিঞ্চিৎ মৃদু ও শ্রবণমধুর হয়। বাদ্যের অলঙ্কারের জন্য সময়ে সময়ে ধ্বনির মৃদুতা ও উগ্রতার প্রয়োজন হইয়া থাকে। নায়কী তার সম্বন্ধীয় আঘাতগুলি কিঞ্চিৎ উগ্রস্বর (Loud) প্রকাশক এবং কাঁচা তারের আঘাত- নিচয় কিঞ্চিৎ মৃদু (Soft) স্বরপ্রকাশক হয়; এই নিমিত্তই পুনরায় কাঁচা তারে রীতিপূর্ব্বক স্বরগ্রাম সাধাইবার প্রয়োজন হইল ( ১ ) ।
পিত্তলতারে মৃদুস্বরসাধন
যদ্যপি নায়কী তারে মৃদু আঘাতের আবশ্যক হয় তাহা হইলে যে সুর হইতে যে সুর পর্য্যন্ত ঐরূপ কার্য্যের প্রয়োজন হইবে, সেই পূর্ব্বস্থর হইতে পর সুর পর্য্যন্ত প্রত্যেক সুরের মস্তকে এইরূপ (…) বিন্দুশ্রেণী চিহ্ণ থাকিবে এইরূপ মৃদু ধ্বনি প্রকাশ করা কেবল মৃদু আঘাতদ্বারা সম্পাদিত হইয়া থাকে। “গৎ” বাদনসময়ে যদ্যপি উগ্র এবং মৃদু না করিয়া সমুদয় আঘাত সমভাবে দেওয়া যায়, তাহা হইলে নিতান্ত শ্রুতিকঠোর এবং নিরলঙ্কত বোধ হইবে। বস্তুতঃ এইরূপ কার্য্য কেবল গৎ বা গীতাদির বিশেষ অলঙ্কার জন্য।
আরও দেখুনঃ

